• আপডেট টাইম : 21/05/2024 01:45 PM
  • 369 বার পঠিত
  • শ্যামল অলমিক
  • sramikawaz.com

বর্তমান দ্রব্যমুল্যের সাথে সংগতিপূর্ণ মজুরি, পর্যাপ্ত রেশন, ভ‚মির অধিকারসহ প্রতিষ্ঠায় সৎ, সংগ্রামী, আপোসহীন শ্রেণিসচেতন নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে তুলুনা

১৯২১ সালের ২০ মে চা-শ্রমিক স্বদেশ যাত্রার রক্তাক্ত কালো অধ্যায়ের বার্ষিকীতে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যাগে ঐতিহাসিক চা-শ্রমিক হত্যা দিবসে আলোচনা সভা ও মিছিল করা হয়। ২০ মে বিকেল ৫ টায় কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগরে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক হরিনারায়ন হাজরার সভাপতিত্বে এ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি ডা. আব্দুশ শহীদ সাগ্নিক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীন, ধ্রæবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, মৌভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সোহেল, চা-শ্রমিক সংঘের যুগ্ম-আহবায়ক শ্যামল অলমিক, রাজনগর বাগানের চা-শ্রমিকনেতা হেমরাজ লোহার, সুনছড়া চা-বাগানের গনেষ ভাস্কর, ¯^পন নায়েক, মাথিউড়া চা-বাগানের দিপক গৌড়. চাতলাপুর চা-বাগানের নারায়ন নাইড়–, দেওছড়া চা-বাগানের রামনারায়ন গৌড়, তেলিহাড়ি চা-বাগানের সুভাষ গৌড়, নারী চা-শ্রমিক অঞ্চলি রবিদাস, মালা নায়েক, আকাশি কালিন্দী, কাজলী হাজরা, সনিয়া ভাস্কর।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন প্রতিবছরের মতো এবারও আমাদের সামনে এসেছে ২০ মে ঐতিহাসিক চা-শ্রমিক হত্যা দিবস। ১৯২১ সালের ২০ মে দিনটি ছিল চা-শ্রমিকদের বাচাঁর জন্য সংঘটিত আন্দোলনে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের সশস্ত্র গুর্খা পুলিশ বাহিনীর নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হাজার হাজার চা-শ্রমিককে হতাহতের ঐতিহাসিক দিন। ঔপনিবেশিক ভারতে বৃটিশ কোম্পানি এককভাবে চা-এর বিশ্ববাজার প্রতিষ্ঠা ও অধিকতর মুনাফার লক্ষ্যে চা-শিল্প গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয়। ভারতের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির গরীব কৃষকদের এনে বাগানে জড়ো করে দাসত্বে বন্ধনে ‘আড়িকাঠি’ ও ‘গিরমিট’ প্রথা দ্বারা আবদ্ধ করে। শুরু হয় মজুরি দাসত্বে পর্যায়। চা-শ্রমিক শিল্পীয় শ্রমিক হিসেবে গড়ে উঠার প্রক্রিয়ায় পাহাড় জঙ্গল পরিস্কার করে চা-আবাদের উপযোগী করতে গিয়ে বাঘ-ভাল্লুকসহ বন্য প্রাণীর আক্রমণ, সাপের বিষাক্ত ছোবল, রক্তচোষা জোঁকের কামড়, মশার কামড় ইত্যাদিতে অগণিত শ্রমিকের প্রাণের বিনিময়ে গড়ে উঠে চা-শিল্প। নির্মম শোষণ অমানুষিক নির্যাতন মানবেতর জীবন জীবিকায় অতিষ্ট বিক্ষুদ্ধ চা-শ্রমিকরা ¯^তঃ¯^তস্ফ‚র্তভাবে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুললেও মজুরি দাসত্বের জীবন যন্ত্রণা থেকে বের হতে না পেরে অবশেষে পূর্বের জীবনে ফিরে যাবার প্রবণতা তীব্রতর হয়। এরই পরিণতিতে ১৯২১ সালের মে মাসে ¯^ভ‚মিতে ¯^জাতির কাছে ফেরার পথে চাঁদপুরে রেলস্টেশন ও স্টিমার ঘাটে ২০ মে সংঘটিত হয় বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের ঘটনা। এই হত্যাযজ্ঞ বঙ্গদেশ-আসামসহ সমগ্র ভারতবর্ষ এমন কি বৃটেনে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ সরকার চা-শ্রমিকদের চা-বাগানে ফিরে যেতে বাধ্য করে। এ সময় বৃহত্তর সিলেট জেলা কমিউনিস্ট পার্টির তৎপরতা শুরু হলে কমরেড অজয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে চা-শিল্পে শ্রমিক সংগঠন ও আন্দোলন এবং গ্রামাঞ্চলে কৃষক সভা ও নানকার আন্দোলন গড়ে উঠে। এই ধারাবাহকতায় পাকিস্তান আমলে চা-শ্রমিক আন্দোলন বেগবান হয়। চা-শ্রমিকরা যাতে মজুরি দাসত্ব থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সংগঠিত হতে না পারে সেজন্য বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের দালাল শাসক শোষক গোষ্ঠি চা-শিল্পে মালিকের ¯^ার্থরক্ষায় শ্রীহট্ট জেলা চা-শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে তুলে। এভাবে একদিকে মালিক ও কোম্পানির পক্ষে অন্যদিকে শ্রমিকদের প্রকৃত সংগঠন-সংগ্রাম গড়ে তোলার পরস্পর বিরোধী তৎপরতা অগ্রসর হয়। এ প্রেক্ষিতে মফিজ আলীর নেতৃত্বে পাকিস্তান আমলে চা-শ্রমিক সংঘ গড়ে তুলে আন্দোলন-সংগ্রাম। কিন্ত মালিক, সরকার ও দালালদের অব্যাহত তৎপরতায় চা-শ্রমিকদের সংগ্রামী ধারা বিপর্যস্ত হয়। চা-শ্রমিকদের বেঁচে থাকার মত মজুরির অধিকার থেকে অদ্যাবধি বঞ্চিত। চা-শ্রমিক, তাদের পরিবার পরিজন, ছাত্রযুবকরা ¯^তঃ¯^তস্ফ‚র্ত অংশগ্রহণে ২০২২ সালের আগষ্ট মাসে চা-শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে সংগঠিত হয় নজিরবিহীন ১৯ দিনের ধর্মঘট। এই আন্দোলনের দালাল নেতারা তাদের ¯^ভাব সুলভ বেঈমানী করতে গিয়ে গণরোষে বেইমানরা ধরাশায়ী হয়। মালিক ও দালালদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত উন্মোচিত ও ব্যর্থ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সরকার ও প্রশাসন মাঠে নামে। সকল পক্ষের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে সরকার প্রধান ১৭০ টাকা মজুরি ঘোষণা করে শ্রমিকদের ঘরে ফিরতে বাধ্য করে। মালিকদের যোগসাজসে এই ঘোষণা দেওয়া হলেও মালিকরা শ্রমিকদের প্রাপ্য বকেয়ার এরিয়ার প্রদানে শুরু করে টালবালহানা। শ্রমিকদের ন্যায্য প্রাপ্য ৩০,২০০ টাকা (ত্রিশ হাজার দুই শত টাকা) এরিয়ার বিলকে অ¯^ীকার করে থোক বরাদ্দের নামে ১১,০০০ টাকা (এগারো হাজার টাকা) তিন কিস্তিতে দিবে বলে নতুন খেলায় নামে। চা-শ্রমিক ইউনিয়নের দেউলিয়াত্বে এই সময়ে মুদ্রাস্ফীতি-মূল্যস্ফীতি, নিয়ন্ত্রণহীন বাজারদরে দৈনিক মাত্র ১৭০ টাকা মজুরিতে চা-শ্রমিকদের জীবনজীবিকা আজ বিপর্যস্ত। আজকের বাজারদরে তিনবেলা খাবারের জন্য ২৫০/- (৫০+১০০+১০০) টাকা হিসেবে ৬ জনের একটি পরিবারের দৈনিক খরচ কম করে হলেও ১০০০ টাকা প্রয়োজন। অথচ এই সময়েও চা-শ্রমিকদের বাঁচার মতো ন্যায্য মজুরির প্রকৃত ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে শ্রমিকদের আবেগকে ব্যবহার করে ননইস্যুকে ইস্যু করে মালিক-ম্যানেজমেন্টের সাথে যোগসাজসে ট্রটক্সীবাদী ও সংশোধনবাদীরা চা-শ্রমিকদের বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। এদের সম্পর্কে সজাগ, সচেতন ও সতর্ক থেকে বাঁচার মতো ন্যায্য মজুরিসহ চা-শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরিসহ চা-শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম-ধর্মঘট সফল করার জন্য কমরেড অজয় ভট্টাচার্য ও মফিজ আলীর ধারাবাহিকতায় চা-শ্রমিকদের আপোসহীন সংগঠন চা-শ্রমিক সংঘের পতাকা তলে সংগঠিত ও ঐক্যবব্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। আলোচনা সভায় নেতারা মালিক, সরকার ও দালাল নেতাদের শ্রমিক¯^ার্থ বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পূর্ণ বকেয়া মজুরি ৩০,২০০ টাকা প্রদানসহ বাজাদরের সাথে সংগতিপূর্ণ ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের জন্য মজুরি ঘোষণা, বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রমবিধি ২০১৫ অনুযায়ী উৎসব বোনাস প্রদান, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক প্রদান এবং ৯০ দিন কাজ করলেই সকল শ্রমিককে স্থায়ী করা, ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপোসকামিতা ও ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে সজাগ থেকে সৎ, সংগ্রামী, আপোসহীন, শ্রেণি সচেতন নেতৃত্বে সংগঠন ও সংগ্রাম গড়ে তুলে দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়ার আহবান জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...