• আপডেট টাইম : 14/07/2021 01:14 PM
  • 444 বার পঠিত
  • আওয়াজ ডেস্ক ( মূল রিপোর্ট মো. মহিউদ্দিন)
  • sramikawaz.com

সিঙ্গপুর থেকে হারিয়ে যাওয়া এমটি মেডান বাংলাদেশের কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিডেটের (কেএসআরএম) শিপব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে জব্দ করেছে বাংলাদেশের নৌ-পুলিশ। জাহাজটি ভাঙ্গার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে অনুমোদনও সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি। জাল কাগজপত্র তৈরি এবং নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

8 জুলাই বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার ভাটিয়ারী এলাকায় খাজা শিপব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে উদ্ধারের পর স্থানীয় প্রশাসনের জিম্মায় রাখা হয়েছে। জাহাজটির পাহারায় চৌকিদার নিয়োগ করেছে ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদ। জাহাজটির বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারে সালিশ চলছে। মালয়েশিয়া পুলিশে ফ্রট কেস রয়েছে।

আমাদের সময় জানায়, চুরি করে বিক্রি করা জাহাজ দেশে আনার কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করছে নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তর। কেএসআরএম মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাহাজটি কাটার অনুমতি নিলেও অনাপত্তিপত্র বাতিল করেছে নৌ-বাণিজ্য দপ্তর।

জানা গেছে, ১৯৯১ সালে জাপানে নির্মিত কুক আইল্যান্ডের পতাকাবাহী এমটি মেডান জাহাজটির মালিক সিঙ্গাপুরের রেজিস্ট্রার্ড কোম্পানি ডায়া মেরিন প্রাইভেট লিমিটেড। জাহাজটি পরিচালনানার (চার্টার্ড) জন্য মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের অরিন এনার্জি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। ৮২ লাখ ইউএস ডলারে ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর চুক্তির পর ১৩ নভেম্বর অরিন এনার্জি কুয়ালালামপুর থেকে ২০ লাখ ডলার ডায়া মেরিনের সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠায়।



একই বছরের ১৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ার লিঙ্গি পোর্টে জাহাজ হস্তান্তর করার কথা ছিল। ১৬ নভেম্বর আরেকটি মাধ্যমে অরিন এনার্জি জানতে পারে জাহাজ মেরামত ও ক্রু পরিবর্তনের জন্য ইন্দোনেশিয়ায় বন্দরে অবস্থান করছে। সেখান থেকে আফ্রিকার পোলাও গিয়ে জাহাজের নাম পরিবর্তন করা হয়। জাহাজ মালয়েশিয়া না এনে নেভিগেশন সিস্টেম বন্ধ রাখায় অরিন এনার্জি মালয়েশিয়া পুলিশের কাছে ফ্রট কেস করে। পরে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারে মামলা হয়। ওই অবস্থায় জাহাজ কিনে বাংলাদেশে নিয়ে আসে কেএসআরএম গ্রুপ। অবৈধভাবে জাহাজটির নাম পরিবর্তন করায় পানামার দায়ান হোল্ডিংস লিমিডেটকেও বিবাদী করা হয়েছে মামলায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, খারাপ উদ্দেশ্যেই ডায়া মেরিন ও কেএসআরএম গ্রুপের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম আইনে এ ধরনের প্রতারণার সুযোগ নেই। কেউ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এমনকি কালো তালিকাভুক্ত করার আশঙ্কাও থাকে। সর্বোপরি আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাহাজের প্রয়োজনীয় সব কিছু আপডেট আছে। স্ক্র্যাপ করার মতো পরিস্থিতিও হয়নি। এর পরও জাহাজটি ভাঙার পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। সরকারি সব দপ্তর ও সংস্থা থেকে জাহাজটি ভাঙার অনুমতি নিয়ে ইয়ার্ডে রেখে নাম পরিবর্তন করে চালানোর আশঙ্কাও রয়েছে।

জানা গেছে, জাহাজটি ভাঙার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, নৌ-বাণিজ্য দপ্তর থেকে অনাপত্তিপত্র নিয়েছে কেএসআরএম। তবে মামলা ও জালিয়াতির বিষয়টি জানানো হয়নি। ফলে নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের অনাপত্তিপত্র বাতিল করা হয়েছে। গত ১৯ মে ১০টি শর্তে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে জাহাজটি ভাঙার অনাপত্তি দেওয়া হয়। সেখানে ৪ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে- জাহাজ বাংলাদেশে পৌঁছার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নৌ-বাণিজ্য দপ্তরকে জানাতে হবে। নৌ-বাণিজ্য দপ্তর একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাঠাবে শিল্প মন্ত্রণালয়ে।

জাহাজ বাংলাদেশে জলসীমায় পৌঁছলে গত ৩ জুন নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন মালয়েশিয়ার পুলিশ ফ্রট অভিযোগের কথা উল্লেখ করে শিপিং মাস্টারকে চিঠি দেন। সেখানে তিনি অনাপত্তি সনদ জারি না করার অনুরোধ করেন। অবৈধ জাহাজ বাংলাদেশে প্রবেশে করলে বহির্বিশে^ সুনাম ক্ষুণ্ন হয় বলে সেখানে উল্লেখ করেছেন। ২০ জুন জাহাজটি গ্রেপ্তারে আদেশ জারি করেন আদালত। ওইদিন আদালতের আদেশ না আসার অজুহাতে নৌ-বাণিজ্য দপ্তর থেকে এনওসি জারি করা হয়। পরদিন ২১ জুন আবার সেটি বাতিল ঘোষণা করে।

ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন বলেন, ওইদিন আমি ঢাকায় ছিলাম। আমার সঙ্গে আলাপ না করে নটিক্যাল সার্ভেয়ার জালাল উদ্দিন গাজী এনওজি দেন। পরদিন আমি বাতিল করে দিয়েছি।

চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আদালতের অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট পেয়ে খোঁজখবর নিতে থাকি। বৃহস্পতিবার খাজা শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে সেটি পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করে ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিনের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। নাজিম উদ্দিন বলেন, জাহাজটি পাহারা দিতে চৌকিদার নিয়োগ করা হয়েছে।

পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে জানিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার পরিচালক মুফিদুল আলম জানান, আদালতের আদেশ আমাদের হাতে আসেনি। আদেশ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

এদিকে জাহাজটির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছে কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম। সূত্র: dainikamadershomoy 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...