কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানা পুলিশের ওপর হোসেনাবাদ আকিজ বিড়ি কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের হামলার ঘটনায় ২৯জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১৫০-২০০ জনের নামে মামলা হয়েছে।
৭ জুন বুধবার রাতে দৌলতপুর থানায় এ মামলা হয়। এ ঘটনায় আটক রুবেল (৩২), সামসুল (৩৪) ও ওয়াসিম (৩৫) নামে ৩ জন শ্রমিককে গ্রেফতার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করেছে দৌলতপুর থানা পুলিশ।
এদিকে বন্ধ ঘোষনার একদিন পর বৃহস্পতিবার হোসেনাবাদ আকিজ বিড়ি কারখানা খুলে দেওয়া হলে উদ্বেগ উৎকন্ঠ নিয়ে বিড়ি কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়। তবে মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে অনেক শ্রমিক কাজে যোগ দেয়নি বলে শ্রমিকদের একটি সূত্র জানিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আকিজ বিড়ি কারখানায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
বুধবার সকালে আকিজ বিড়ি কারখানা বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে বিড়ি কারাখানার ভেতর শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং শ্রমিকরাও পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ একরাউন্ড ফাকা রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে সড়ক অবরোধকারী বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পুলিশ শ্রমিক সংঘর্ষে এক পুলিশসহ অন্তত ৫জন আহত হ’ন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আকিজ বিড়ি কারখানার শ্রমিক নান্নু, বিপ্লব ও কালামসহ বরখাস্ত হওয়া শ্রমিকরা বুধবার সকালে হোসেনাবাদ আকিজ বিড়ি কারাখানায় যোগ দিতে গেলে বিড়ি কারখানার ম্যানেজার পলাশ আহমেদের সাথে তাদের বাকবিতন্ডা হয়। এসময় কারাখানার ভেতর শ্রমিকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারাখানা কতৃপক্ষ আকিজ বিড়ি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেন। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কের হোসেনাবাদ বাজারে কাঠের গুড়ি ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বেলে সড়ক অবরোধ করেলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়ক অবরোধকারী শ্রমিকদের ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ¯^াভাবিক করে। শ্রমিকদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের লঠিচাজে ৪জন শ্রমিক ও শ্রমিকদের ইটের আঘাতে একজন পুলিশ সদস্য আহত হয়।
এদিকে শ্রমিকদের অভিযোগ নকল ব্যান্ডরোল দিয়ে আকিজ বিড়ির প্যাকেট তৈরী করার প্রতিবাদে আকিজ বিড়ি কারখানার ম্যানেজার পলাশ আহমেদ ও সহকারী ম্যানেজার আমিরুল ইসলামের সাথে শ্রমিকদের বাকবিতন্ডা হয়। এরই জের ধরে বিড়ি কারখানার ম্যানেজার পলাশ আহমেদ পুলিশ দিয়ে শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করালে এবং বিড়ি কারাখানা বন্ধ ঘোষণা করলে প্রতিবাদে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে। নকল ব্যান্ডরোল দিয়ে বিড়ি বাজারজাতকরা ও সরকারের রাজ¯^ ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার হোসেনাবাদ আকিজ বিড়ি কারখানায় অভিযান চালায়। আকিজ বিড়ি কারখানার ম্যানেজার পলাশ আহমেদ, সহকারী ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম ও নকল ব্যান্ডরোল সরকরাহকারী কৈপাল গ্রামের শ্রমিক নাহারুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে নকল ব্যান্ডরোল দিয়ে বিড়ি প্যাকেটজাত করে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজ¯^ ফাঁকি দিয়ে আসছেন এমন অভিযোগে শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা ওই বিড়ি কারখানায় অভিযান চালায় বলে শ্রমিকরা জানায়।
হোসেনাবাদ আকিজ বিড়ি কারখানার ঘটনার বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি এস এম জাবীদ হাসান বলেন, এ ঘটনায় ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত ১৫০-২০০ জনের নামে মামলা হয়েছে। মামলার এজাহার নামীয় ৩জন আসামিকে গ্রেফতার করে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।