• আপডেট টাইম : 29/11/2021 02:04 AM
  • 418 বার পঠিত
  • আওয়াজ প্রতিবেদক
  • sramikawaz.com

জাফর আহমদ: মিরপুরের একটি কারখানার অবহেলার কারণে পুরো এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। এর ফল ভোগ করতে হলো মিরপুরের কমপক্ষে ১০টি কারখানাকে। নভেম্বরের ২৩ ও ২৪ তারিখে সংগঠিত শ্রমিক অসন্তোষ পরবর্তিতে অনুসন্ধান করে এমন চিত্র মিলেছে।
মিরপুরের ১০ নম্বরে অবস্থিত আইডিএস গ্রæপের কারখানা ফোরইউ ক্লদিং কারখানার অসন্তোষ ১০ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের পুরো শিল্প এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। যা একটি কালখানার মালিকের অবহেলা ও মালিক-শ্রমিক দূরত্বের কারণে ঘটে থাকে। এর ফলে কমপক্ষে ১০টি কারখানায় প্রভাব পড়ে; চারদিন উৎপাদন বন্ধ থাকে, রপ্তানি বন্ধ রাখতে হয় এবং একজন শ্রমিক গুরুতর আহত হন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিরপুরের ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত ফোরইউ ক্লদিং কারখানার শ্রমিকরা অভ্যান্তরিন কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে দাবি দাওয়া জানিয়ে আসছিল। তাদের প্রথম দাবি ও একই সাথে অভিযোগ ছিল ছোট্ট খাট দাবি থাকলেও কারখানার প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক সমাধান করতেন না, ঝুলিয়ে রাখতেন। বিষয়টি নিয়ে কারখানা মালিকের সঙ্গে আলোচনা করতেন না। এর ফলে শ্রমিকদের দাবি উঠে তারা মালিকের সঙ্গে কথা বলবেন এবং উৎপাদন বোনাস বৃদ্ধি, আইনানুগ ছুটি প্রদান ও মাতৃকালিন ছুটির টাকা প্রদানের মত কিছু দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষরুপ নেয় বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনে।
প্রথম ২১ নভেম্বর ফোরইউ ক্লদিং কারখানার শ্রমিকরা ১৯ দফার দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করে। এ কর্মবিরতি ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত গড়ায়। দাবি না মানায় ২৩ নভেম্বর শ্রমিকরা আশেপাশের সকল কারখানা শ্রমিকদের আন্দোলনে সামিল করার জন্য বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। এ সময় বিভিন্ন কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন যখন বহিরাগত মানুষের হামলায় সরজ নামে একটি কারখানার শ্রমিক হরুনকে লাঠিপেটা করে গুরুতর আহত হন। এ খর ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরাও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এ সময় মিরপুর-কাফরুল সড়ক অবরোধ করে বসে শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ সময় এমবিএিম নামে একটি কারখানা ভাড়াটে শ্রমিকদের উপর হামলা করে শ্রমিক হারুনকে গুরুতর আহত করলে এমবিএম কারখানায় হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় কারখানাটির কিচু কম্পিউটার ও আসবাব ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। মুনলাইন নামে একটি কালখানার গেটে হামলা হয়। ভিশন নামে অপর একটি কারখানায় গেটে হামলা হয়। সড়কে অবরোধের ঘটনা ঘটে। গাড়ী ভাংচুর হয়। এ সময় এক ফোরইউ ক্লদিং কারখানার অভ্যান্তরিন কিছু সমস্যা রুপ নেয় মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে। এ সময় শ্রমিকরা মজুরি বোর্ড গঠন ও নতুন ন্যূনতম মজুরি ঘোষনার দাবি জানান। তারা গণমাধ্যমের কাছে বলেন, নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়িার কারণে জীবন যাত্র্রা ব্যায় বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় আর চলছে না। নতুন মজুরি ঘোসণা করতে হবে। প্রতি বছর যে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয় পাল্লা দিয়ে জীবন যাত্রার ব্যয়ের বৃদ্ধির সাথে সমš^য় করা যাচ্ছে না। এ জন্য শুধু বাৎসরিক মজুরি বৃদ্ধি নয়, মজুরি বৃদ্ধির জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করতে হবে। এ আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে গাজীপুর, আশুলিয়া ও নারায়নগঞ্জের শ্রমিকরা ফেসবুকে সংহতি জানাতে থাকে। মিরপুরের শ্রমিক সংগঠনগুলোও শ্রমিকদের আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়। এর ফলে একটি কারখানার


২৮ নভেম্বর সকালে দেখা যায় মিরপুর-১০ এর সেনপাড়ায় অবস্থিত আইডিএস গ্রæপের ফোরইউ ক্লদিং নামের যে পোশাক কারখানাটিতে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে শ্রমিক বি¶োভ ছড়িয়ে পড়ে এবং আশে-পাশের কারখানা বন্ধ হয়েছিল, ওই ফোরইউ ক্লদিং কারখানাটি সহ সকল কারখানা যথারীতি সকাল ৮টা থেকে উৎপাদন শুরু হয়। উৎপাদন শুরু হয়েছে পাশেই অবস্থিত ভিশন গার্মেন্টস কারখানা, এমবিএম কারখানা, মুনলাইট কারখানা, লোডস্টার, ড্রিমওয়্যার ও রিসাল কারখানা। তবে ভিশন কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েই আগে উপস্থাপিত বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পূরণের দাবি জানান। কারখানাটির একটি সূত্র জানায়, শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করেই ¯^ ¯^ মেশিনে বসেই দাবি জানাতে থাকেন। পরে মালিক এসে দাবি পূরণের আশ^াস দেন। কারখানায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বৈঠক বসেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।


শ্রমিক সুত্রগুলো জানায়, ২৩ নভে¤\^র এমএবিএম কারখানার লোক বলে পরিচিত বাইরের লোকজন শ্রমিকদের মারধর ও হারুন নামে একজন শ্রমিক গুরুতর আহত হওয়ার কারণে শ্রমিক বি¶োভ ছড়িয়ে পড়ে। এবং এরপরই এমবিএম কারখানাতে অফিসের কম্পিউটার সহ বিভিন্ন আসবাবপত্র নষ্টের ঘটনা ঘটে, আজ সকালে যথারীতি কারখানাটি চালু হয়। আগের মতই কারখানাটির আশে-পাশে বহিরাগত লোকজনকে সতর্ক অবস্থান নিয়ে অবস্থান করছেন। ফোরইউ ক্লদিং সহ কারখানাগুলোর আশে-পাশে পুলিশ ভ্যানও টহল দিতে দেখা গেছে।


উল্লেখ্য, ২১ নভে¤\^র ফোরইউ ক্লদিং কারখানার শ্রমিকরা মালিকের সাথে দেখা করা সহ ১৯ দফা দাবিতে কারখানার বাইরে আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করেন। ২৩ নভে¤\^র পর্যন্ত দাবি না মানলে শ্রমিকরা আশেপাশের কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনে শরীক হওয়ার জন্য বিভিন্ন কারখানায় ইটপাটকেল নি¶োপ করেন শ্রমিকরা। শ্রমিকদের অভিযোগ, এ সময় এমবিএম কারখানার লোকজন যারা বাইরের থেকে আসা-এ সব লোকজন লাঠি-সোটা দিয়ে মারধর করে কারখানা এলাকা থেকে শ্রমিকদের তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় রিসল গার্মেন্টস কারখানার আইরনম্যান হারুন নামে একজন শ্রমিককে লাঠিপেটা করে গুরুতর আহত করে। এরপর সকল কারখানার শ্রমিকরা বের হয়ে বি¶োভ শুরু করেন। ফোরইউ ক্লদিং কারখানার শ্রমিকদের দাবি চাপা পড়ে যায়, শুরু হয় মজুরি বৃদ্ধিরর জন্য বি¶োভ। এ সময় কারখানার বাইরে মিরপুর-কাফরুল সড়কে অবরোধ করে শ্রমিকরা বি¶োভ শুরু করেন। পরে প্রশাসনের হস্ত¶েপে শ্রমিকরা বাসায় ফিরে যান। এরপরই বুধবার ২৪ নভে¤\^র থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য এ সব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ সময় কিছু শ্রমিককে গ্রেফতারের ঘটনা।
শনিবার ২৭ নভে¤\^র কারখানা চালু হলে আবারও শ্রমিকরা বি¶োভ শুরু করেন। এ সময় তারা গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মুক্তি ও পুলিশি হয়রানি বন্ধের দাবি জানান। এ অবস্থায় আবারও কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে মালিকরা। ইতোমধ্যে ফোরইউ ক্লদিং কারখানার কর্তৃপ¶ ঘোষণা করেন গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মধ্যে কোন শ্রমিক যদি ক্লদিং কারখানার থাকে তাকে কারখানা কর্তৃপ¶ ছাড়িয়ে আনবেন।
২৮ নভেশ^র রোববার সকাল ৮টা থেকে এ সব কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...