• আপডেট টাইম : 27/06/2022 03:36 AM
  • 504 বার পঠিত
  • মো: কামরুজ্জামান, আশুলিয়া
  • sramikawaz.com

 হঠাৎ করে ব্যাটারি চালিত রিকশা চালকদের বিক্ষোভ অবরোধ অচল হয়ে গিয়েছিল সাভার-চন্দ্রা মহ সড়কের বাইপাল-নবীনগর। ক্ষোভে জ্বলছিলেন শ্রমিকরা। কিন্তু বলতে পারেননি কি তাদের দাবি।  দুয়েকজন যারা কথা বলেছে তাদের দাবি সড়কে রিকসা-অটো চালানোর সময় হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

 প্রাথমিক তথ্যমতে, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় থানা পুলিশের সদস্য সহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। এই আন্দোলনের পেছনে ‘অসাধু ইন্ধনদাতা’ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 ২৭ জুন সোমবার সকাল থেকে আশুলিয়ার বাইপাইলে জমায়েত হতে থাকেন অত্র এলাকার অটো রিকশা চালকগণ। পরে মিছিল নিয়ে বাইপাইল থেকে পল্লীবিদ্যুৎ অভিমুখে যাত্রা করেন তারা। মাঝে পলাশবাড়ি এলাকায় পুলিশি বাধার মুখে পরে ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। 

 সরেজমিনে দেখা যায় পলাশবাড়ি এলাকায় সড়কে বিদ্যুতের খুঁটি আড়াআড়ি ভাবে রেখে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। এসময় সড়কের মাঝে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে থাকেন প্রায় হাজারও শ্রমিক ও চালক। সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এসময় আশুলিয়া থানার একজন এসআই ও দুজন এএসআই সহ প্রায় ৭ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে এসআই শ্যামলেন্দু ঘোষ মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়ে শেখ ফজিলাতুন্নেছা কেপিজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 একেক রিকশা চালক একেক ধরনের তথ্য দেয়। আন্দোলনে অংশ নেয়া এক চালক বলেন, আমাদের রিক্সা আটকায়, জরিমানা করে এইসব নিয়েই আন্দোলন। তাহলে কি চান আপনারা, জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, আমরা বাঁধা ছাড়া রিক্সা চালাতে চাই। মহাসড়কে অটোরিক্সা চলাচলের অনুমতি নেই তাও কেন এই আন্দোলন জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেননি। 

 

এরকম আরও কয়েক রিক্সাচালকের কাছে এমন বিশাল আন্দোলনের কারণ বা মূল দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলেও মেলেনি সদুত্তর। তবে অনেকের সাথে কথা বলে বোঝা যায় যে মহাসড়কে অটো রিক্সাচলাচলের উপর হাইওয়ে পুলিশের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে তারা রাস্তায় নেমেছেন।

 আবার কেউ বলেন, আমরা রিকশা নিয়ে মহাসড়কে না উঠলেও হাইওয়ে পুলিশ আমাদের রিকশা ধরে ২৬০০ টাকা জরিমানা করেন। এক মাসে কয়েকবারও জরিমানা আদায় করে পুলিশ। আমরা গরিব মানুষ, কয়দিন পরপর যদি ২৬০০ টাকা দেই, তাহলে আমরা কীভাবে চলব। 

 আরেক রিকশা চালক বলেন, গতকালকে নাকি মাইক মারছে। আজকে সমাবেশ। সব রিকশাওয়ালা আসছে এটা কি সমাধান করা যায়। এসে দেখি তো কিছু না। 

 

এদিকে গত ২৫ জুন ৫ টি দাবীতে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করেছিলো আশুলিয়া থানা রিক্সা ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন। 

 এ বিষয়ে সগঠনটির আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল আলম মিন্টু বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কারনে ২৫ জুনের সেই কর্মসূচী পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পযন্ত স্থগিত করা হয়। তবে তার আগে লিফলেট বিলি হওয়াতে সেইদিন কিছু চালক কর্মসূচী করার চেষ্টা করে। তবে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। 

 তিনি আরো বলেন, পরে রবিবার রাতে আমাদের সংগঠন বহিঃর্ভূত কে বা কারা আশুলিয়ার বাইপাইলসহ আশেপাশের এলাকাতে এমন কর্মসূচীর কথা বলে মাইকিং করেন। পরে আজ সোমবার (২৭ জুন) সকাল থেকে কয়েকশত রিকশাচালক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রিকশা চালকদের উদ্দেশ্যহীন ভাবে এমন জনতাবদ্ধ করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার পেছনে অসাধু উদ্দেশ্য রয়েছে।

 এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানা রিক্সা ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ২৫ জুন কার্যক্রম করার কথা ছিল। তবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন হওয়ায় আমরা পুলিশের অনুরোধে কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করি। রিক্সা চলাচলের জন্য আলাদা লেন নির্মাণ আমাদের মূল দাবি ছিল। পুলিশ হয়রানি করে, হেনস্তা করে, রেকার বিলের ঝামেলা এমন অভিযোগ আমাদেরও আছে। কিন্তু আমরা আজকে সড়কে আন্দোলন করিনি।

তিনি আরও বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই করতে চেয়েছিলাম। কে বা কারা আজকে বিশৃংখলা করেছে আমার জানা নেই। আমাদের কার্যক্রম এখনো স্থগিত। গতকাল পলাশবাড়ি, পল্লীবিদ্যুৎ, কাইচাবাড়ি এসমস্ত এলাকায় মাইকিং করে আজকের আন্দোলনের ডাক দিয়েছে কেউ। কিন্তু কে বা কারা মাইকিং করেছে আমরাও খুঁজে পাইনি।

 এ ব্যাপারে সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক(ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, সামনে যে পড়বে, সে ধরা পড়বে। একদিনে কি আর এ টু জেড ধরা যায়? কোন সংগঠন হয়ত আছে তাদের সংগঠিত করতে পারে। যারা চাঁদা উঠায়। এমন কিছু থাকতে পারে যে, বিশেষ কোন মহল বা বিশেষ কোন সংগঠন যারা কমিটি করে শ্রমিকদের উসকে দিয়ে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করতে পারে। কোন একটা সমিতি আছে, শুনেছি ওরা নাকি চাঁদা তুলে। উদ্দেশ্য বা ফায়দা না থাকলে তো এমন কেউ করেনা। আইন বহিঃর্ভূত কোন কার্যক্রম বা টাকা পয়সা লেনদেনের সাথে হাইওয়ে থানার কেউ জড়িত নন।

 উল্লেখ, ২০০৪ ইপিজেড এলাকায়, ২০০৬ মজুরির বৃদ্ধির দাবিতে পুরো আশুলিয়া-সাভার, ২০১০,২০১৩, ২০১৭ সালে এ সব এলাকা মজুরির বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করেছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...